পানিচক্র বা হাইড্রলজিক চক্র – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “পরিবেশ অধ্যয়ন” বিষয়ের “প্রাকৃতিক সম্পদ” বিভাগের একটি পাঠ। জলচক্র, যা হাইড্রোলজিক চক্র বা হাইড্রোলজিক্যাল চক্র বা পানিচক্র একটি জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরে এবং নীচে জলের ক্রমাগত গতিবিধি বর্ণনা করে। এই প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক প্রভাবে ক্রমাগত রূপান্তরের মাধ্যমে জল-এর চক্রাকারে তথা ক্রমাগত সঞ্চারণশীলতা। এই চক্রকে হাইড্রলজিক্যাল চক্র বা H2O চক্র বলা হয় । এই জলচক্র-এর জন্যেই এই পৃথিবী-তে জল-এর সামঞ্জস্য অব্যহত থাকে।
পানি-চক্র বা হাইড্রলজিক চক্র
পানির অপর নাম জীবন। ভূপৃষ্ঠের শতকরা ৭১.৪ ভাগ জুড়ে আছে বারিমণ্ডল (Hydrosphere) সাগর-ময় স্থলভাগ এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে পানির (তরল বাস্ট জমাট বাঁধা অবস্থায়) চক্রাকারে আবর্তনকে পানি-চক্র বলে। বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠ এবং পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়। পানির এই আবর্তনকে পানি-চক্র বলে। পানি-চক্র প্রধানত তিনটি প্রক্রিয়ায় ঘটে; যেমন- বাষ্পীভবন, ঘনীভবন ও বৃষ্টিপাত এবং থিতানো। এই প্রক্রিয়ার একটির বিঘ্ন ঘটলে পানি-চক্রের ভারসাম্য ব্যাহত হয়।

বাষ্পীভবন (Evaporation) :
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয় বাষ্প হিসাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তাকে বাষ্পীভবন বলে । সৌরশক্তি বাষ্পীভবনের প্রধান নিয়ামক। সাগর থেকে পানি বাষ্পায়িত হয়ে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে জমা হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। মাটি, নদীনালা, খালবিল, হাওরবাঁওড়, হ্রদ ইত্যাদি জলাশয় থেকে বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে। এছাড়া স্থলজ উদ্ভিদের প্রস্বেদন এর ফলেও প্রচুর পানি বাষ্পাকারে পরিণত হয়।
ঘনীভবন ও বৃষ্টিপাত (Condensation and Precipitation) :
বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জলীয় বাষ্প হয়ে উপরে উঠে ক্রমশ শীতল হয়ে ঘন হয়, একেই ঘনীভবন বলে। বায়ুর আর্দ্রতা যখন ১০০ ভাগ হয় কেবল তখনই জলীয় বাষ্প বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি হিসেবে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
থিতানো (Sedimentation) :
স্থলভাগ বৃষ্টির পানির এক অংশ বদ্ধ জলাশয়ে জমা হয়ে থিতানোর মাধ্যমে তা ব্যবহারোপযোগী হয় এবং এক অংশ ফিল্টার হয়ে নিচের দিকে যায় এবং ভূনিম্নস্থ পানির স্তর (Ground water) সৃষ্টি হয়। ভূনিম্নস্থ পানি পুনরায় গাছপালা, নদনদী ও মাটিতে সরবরাহ করা হয়।
পানি-চক্রের গুরুত্ব (Importance of water cycle) :
(i) পানিই হলো জীবের জীবন। পানি-চক্র না থাকলে জীবের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
(ii) সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মূল দিয়ে পানি শোষণ করে পানির হাইড্রোজেন খাদ্য তৈরিতে সাহায্যে করে। এবং অক্সিজেন পরিবেশে নির্গত করে।
(iii) মৃত্তিকা গঠন ও উদ্ভিদের শরীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনা করার জন্য পানি প্রয়োজন ।
(iv) বাস্তুতন্ত্রের আকৃতি ও প্রকৃতি পানির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে।
(v) মানুষ খাদ্যোপকরণ সংগ্রহ সুলভ পরিবহন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিভিন্ন সাংসারিক কাজে পানি ব্যবহার করে।

আরও দেখুন :