বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি

 

বন্যা ও বন্যা ব্যবস্থাপনা

 

শীতপ্রধান দেশে গ্রিন হাউসের (কাঁচ নির্মিত একটি ঘর) মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে সবুজ উদ্ভিদ জন্মানো হয়। গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ শীতপ্রধান দেশের গ্রিন হাউস ঘরের ন্যায় সূর্য থেকে আগত রশ্মি তাপ বিকিরণে বাঁধা সৃষ্টি করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। গ্রিন হাউস গ্যাস কর্তৃক বায়ুমণ্ডলের এইরূপ তাপ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট (Greenhouse effect) বলে।

গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট কথাটি সর্বপ্রথম সোভানটে আরহেনিয়াস প্রথম ব্যবহার করেন। গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ হলো-কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC)। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হিসেবে নিয়ে গ্রিন হাউস গ্যাস ও গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ

কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2):

কার্বন ডাইঅক্সাইড বর্ণহীন, সামান্য গন্ধযুক্ত কার্বন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত একটি গ্যাস। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ০.০৩ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড। জীবের প্রশ্বাসের সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইড, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে, উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহের পচন, মোটরযান ও শিল্প কারখানার জ্বালানি (কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তৈল) পোড়ানো থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়।

বর্তমানে তরল ও কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে আইসক্রিম, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। সবুজ উদ্ভিদ এর খাদ্য প্রস্তুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করলেও বন উজাড় বৃদ্ধি পাওয়ায়, অধিক হারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, মোটরযানের সংখ্যা প্রভৃতি বৃদ্ধির কারণে বায়ুমণ্ডলে বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে এবং বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করছে।

মিথেন (CH4):

প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন। এছাড়াও জলাভূমিতে পানির নিচে পানা পচনের মাধ্যমে, ধানের বর্জ্য অবশিষ্টাংশের পচন থেকে মিথেন পাওয়া যায়। তাপ ধারণ ক্ষমতার ক্ষেত্রে মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের চাইতে ২০ গুণ বেশি তাপ ধারণ করে।

ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC):

সিএফসি সাধারণত বিষমুক্ত, নিষ্ক্রিয় এবং ফ্লোরিন ও কার্বনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ। সিএফসি হিমায়নে (ফ্রিজ, এসি) ও স্প্রে-ক্যানে (অ্যারেসোল), মাইক্রো ইলেকট্রিক সার্কিট ও প্লাস্টিক ফোমে ব্যবহৃত হয়।

নাইট্রাস অক্সাইড (N2O):

অক্সিজেনের সাথে নাইট্রোজেন যুক্ত হয়ে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ তৈরি করে। এটিও বর্ণহীন, সামান্য মিষ্টিগন্ধযুক্ত। এই গ্যাসের উৎসসমূহ হলো মোটরযান, শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার, কারখানা ।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া

বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের ক্রমাগত বৃদ্ধি বৈশ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে এবং বিশ্ব উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পরিবেশের যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তাকে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া বলে। নিম্নে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় অধিক প্রভাবিত হওয়া খাতসমূহ বর্ণনা করা হলো-

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ( Sea – Level):

গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসারণের কারণে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া ক্রমাগত চলতে থাকলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলশ্রুতিতে মেরু অঞ্চলের বরফ ও হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১.৫ মিটারের অধিক হলে নিউইয়র্ক, লন্ডন, সিউল, বেইজিং এর মতো উপকূলীয় শহর, দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ যেমন মালদ্বীপ, টোকিও শহরসমূহ সহ উপকূলবর্তী অনেক এলাকা সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন (Weather and Climate Change ):

বৈশ্বিক পরিবেশের মোট তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণের তাপমণ্ডল ১০০-১৫০ কিলোমিটার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সরে যাবে। এই কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানসমূহের (বৃষ্টিপাত, আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত) পরিবর্তনের কারণে মরুকরণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোচীন, মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ায় বর্ষার প্রকোপ বাড়তে পারে। অপরদিকে শীতপ্রধান দেশ যেমন কানাডা, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ এতো বেশি থাকবে না ।

কৃষিশস্যের ক্ষতি (Damage of Agricultural Grains):

কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে শস্যজাত কৃষিপণ্য যেমন ধান ও সয়াবিন জাতীয় শস্যের উৎপাদন কমে যাবে।

স্থলজ ও জলজ প্রাণি সম্পদ (Land and Aquatic Animal Resources ) :

ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে সহজে প্রবেশ করে। এতে স্থলজ ও জলজ প্রতিবেশ সংকটাপূর্ণ হয়। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এন্টার্কটিকার ফাইটোপ্লাংকটন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে, ফাইটোপ্লাংকটনের ওপর নির্ভরশীল ফুডচেইন হুমকির সম্মুক্ষীণ হবে ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural Disaster):

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়সমূহ (আইলা, আম্পান, সিডর) বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফল ।

 

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি

 

জীববৈচিত্র্য (Biodiversity):

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবী থেকে বহুপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কী অনেক প্রজাতি বিশ্বব্যাপী হুমকিস্বরূপ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment