আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তন
পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তন
মানুষ পরিবেশ মিথষ্ক্রিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে পরিবেশগত অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত শিল্পবিপ্লবের সূচনার মাধ্যমে যখন আধুনিক জীবনের সূত্রপাত হয় তখন থেকেই পরিবেশগত অবক্ষয়ের সূচনা।
এটি মানুষের অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ, তথা আর্থসামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের ফসল। পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং প্রতিবেশের জীববৈচিত্র্যের হ্রাসের মাধ্যমে পরিবেশগত অবক্ষয় হয়।
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে পরিবেশগত বিন্যাসের তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতিসাধন এবং পরিবেশগত প্রক্রিয়ার অবলুপ্তিকে পরিবেশ অবক্ষয় বলে। এছাড়া পরিবেশের সামাজিক এবং পরিবেশগত উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন মিটানোর ধারণক্ষমতা হ্রাসকেও পরিবেশগত অবক্ষয় বলে। নিম্নে পরিবেশগত অবক্ষয়ের কতিপয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-
Derrick Tensen The Problem of Civilization, “The Global industrial economy is the engine for massive environmental degradation and massive human and non-human improvement”. অর্থাৎ বৈশ্বিক শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিকে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং মানুষ ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হয়।
উইকিপিডিয়া (Wikipedia) অনুযায়ী, “Environmental Degradation is the deterioration of the environment through depletion of resources, such as air, water and soil; the destruction of ecosystems and the extinction of wildlife”. অর্থাৎ “পরিবেশগত অবক্ষয় হচ্ছে পরিবেশগত সম্পদসমূহের (বায়ু, পানি, মাটি) অবনতির মাধ্যমে পরিবেশের অবনতি, প্রতিবেশের ক্ষতি এবং বৃহৎ প্রতিবেশের প্রজাতির বিলুপ্তি।”
আন্তর্জাতিক সংস্থার কৌশল (United Nations International Strategy) অনুযায়ী, “Environmental degradation refers the reduction of the Capacity of the environment to meet social and ecological objectives and needs”. অর্থাৎ “পরিবেশগত অবক্ষয় হচ্ছে সামাজিক এবং পরিবেশগত উদ্দেশ্য ও চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশের ক্ষমতা হ্রাস ।
পরিবেশ অবক্ষয়কে Environmental Impact এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়| Environmental Impact এর সূত্রটি হলো-
পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণ
পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি অব্যাহত হতে থাকলে পরিবেশ অবক্ষয় হয়। দূষণ ও পরিবেশ অবক্ষয় এর মধ্যে সুষ্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যদিও অনেকে সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করেন। দূষণ স্বল্প এলাকায় বা স্থানীয় পরিসীমায় হতে পারে কিন্তু পরিবেশ অবক্ষয় স্থানীয়, জাতীয় ও বিশ্বজনীন হতে পারে। পরিবেশ অবক্ষয় দীর্ঘ সময়ে (শতাব্দী) হয়ে থাকে অপরদিকে পরিবেশ দূষণ স্বল্প সময়ে হতে পারে।
যেমন- বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো পরিবেশ অবক্ষয় এবং বাংলাদেশের বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ হলো পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ সমাজবিজ্ঞানীরা পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণসমূহকে ছাতা (Umbrella Concept) হিসেবে দেখিয়েছেন। চিত্র-১০.২ লক্ষ করুন।
চিত্র-১০.২ পরিবেশ অবক্ষয়ের আম্ব্রেলা (Umbrella) ধারণা
পরিবেশগত অবক্ষয় প্রধানত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশক্ষয়ের কারণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, ভূমির অবনমন ও উত্থান, চ্যুতি, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, বায়ুমন্ডলীয় ঝড়, দাবানল, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, অত্যধিক তুষারপাত, ভূ-তাত্ত্বিক ক্ষয়ীভবন, ভূমিধস, হিমানী সম্প্রপাত বন্যা প্রভৃতি।
প্রাকৃতিক নিয়ামকসমূহ প্রতিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং পরিবেশের অবক্ষয় তৈরি করে। মানবসৃষ্ট কারণসমূহের প্রধান কারণ হলো দূষণ। যেমন-বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, শব্দদূষণ ও ভূমি দূষণ প্রভৃতি। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে, বৃষ্টিহীনতা, লবণাক্ততা প্রভৃতি কারণে ভূমির স্বাভাবিক গুণাগুণ ও আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে পরিবেশগত অবক্ষয় হয়।
আধুনিকায়নের কারণে যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্প বর্জ্য, কৃষিবর্জ্য, পানি দূষণ প্রভৃতি কারণে পরিবেশ অবক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন
প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিনিয়ত আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানসমূহের পরিবর্তন হয়। কিন্তু যখন আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানসমূহের স্থায়ী পরিবর্তন হয়, তখন তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে। বিশ্বের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
আইএফআরসি এর বৈশ্বিক দুর্যোগ রিপোর্ট, ২০১৮ অনুযায়ী বিশ্বের ১৭৩টি দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। যেমন-
১। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি পাছে।
২। আকস্মিক বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে।
৩। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা দেখা যাচ্ছে।
৪। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ক্ষতি সাধন জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শুধুমাত্র রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অনুভূত হতো। কিন্তু বর্তমানে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠেছে।
২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১° সেন্ট্রিগ্রেড থেকে ১.৫° সেন্ট্রেগ্রেড পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করেছে। । জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাত, দেরিতে বর্ষাকাল, স্বল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত, অসময়ে বৃষ্টিপাত, ভারি বর্ষণ, লবনাক্ততা ইত্যাদি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে লবণাক্ততা বর্ষা মৌসুমে ১০ শতাংশ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা বেড়ে ৪০ শতাংশ হয় । ইউএসবি এবং আইপিএস রিপোর্ট, ২০২০ অনুযায়ী লবণাক্ততা বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়ছে।
যেমন- ২০০৯ সালে যেখানে ১০৫.৬ মিলিয়ন হেক্টর এলাকায় লবণাক্ততা ছিল তা বেড়ে ২০১৯ সালে ১০৯.৮ মিলিয়ন হেক্টর হয়। লবণাক্ততার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি অংশের কৃষিবৈচিত্র্য বদলে যাচ্ছে (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ২০২০)। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার দরুন উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙ্গন এবং ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের তীব্রতা ও মাত্রা বেড়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তিও ঘটছে।
ইউএনডিপি ২০১৯ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালে চরচঙ্গা স্টেশন হাতিয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ৫.৭৩ মিলিমিটার এবং একই সময়ে হিরণ পয়েন্টে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ৩.৩৮ মিলিমিটার।
পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা
পরিবেশের সাথে জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ) সম্পর্ক নিবিড় এবং নিরবিচ্ছিন্ন। তাই পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য আবাদি ভূমির সংকোচন, অধিক পরিমাণে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এর ব্যবহার, বনভূমি হ্রাস, অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা স্থাপন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে এবং পরিবেশগত অবক্ষয় বাড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে।
যেমন- ওজোন স্তরের ক্ষতিসাধনের ফলে তৈরি হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। পরিবেশগত অবক্ষয় নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো বা মিটিগেশনের জন্য সর্বপ্রথম জনসাধারণকে পরিবেশ দূষণের কারণ ও দূষণ নির্ণয় করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে, দেশ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম (পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন) ও ডিজিটাল সোশাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশগত বিভিন্ন নীতির প্রায়োগিক দিক নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ দূষণের কবল থেকে বাঁচার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বনায়ন। জাতীয় বন-নীতি অনুসরণ করে অধিক হারে বনায়ন করতে হবে।
বায়ুকে দূষিত করার পূর্বেই দূষিত বায়ু যেন নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। দূষিত পদার্থের পরিমাণ অনুযায়ী বায়ুতে রাসায়নিক পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছিটিয়ে দিলে দূষিত পদার্থকে নিরপেক্ষ করা যায়। জাপানের এসিড বৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছে। মটরযানের ধোঁয়া থেকে দূষণ রোধ করার জন্য সিসামুক্ত পেট্রোল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যায়। এতে বায়ু দূষণ রোধ করা যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সুনামি, সিডর, নার্গিস, আইলাসহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধ্বস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে গেছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য প্রধান দুইটি কৌশল অবলম্বন করা হয়। যথা-
১। মিটিগেশন (Mitigation )
২। অভিযোজন কৌশল (Adaptation Strategy )
মিটিগেশন (Mitigation):
মিটিগেশন হলো জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাইস গ্যাসসমূহের (CO2, CH4, CFC) বৃদ্ধি যা বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা ধরে রেখে গ্রিন হাউসের ন্যায় করার দরুন বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে চিত্র- লক্ষ করুন।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাণুজ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বনায়ন করতে উৎসাহিত করতে হবে। বন নিধন হ্রাস করতে হবে।

অভিযোজন (Abaptation) :
পরিবর্তিত জলবায়ুতে বেঁচে থাকার জন্য গৃহীত সকল ধরনের কর্মকাণ্ড হলো অভিযোজন বা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো।
অভিযোজন কৌশল (Adaptation Strategy): এ লক্ষ্যে নিম্নোক্ত অভিযোজন কৌশলসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা-
- সাইক্লোন, ঝড়-জলোচ্ছাস, টর্নেডোর মাত্রা রোধকল্পে উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বনায়ন করতে হবে। যেমন: উপকূলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সৃষ্টি করা যেতে পারে। জোয়ারের ঠিক বাইরের এলাকায় বিভিন্ন স্তরের (উচ্চতার) বন সৃষ্টি করা যেতে পারে। বাতাসের বেগ কমাতে স্বল্প দূরত্বে গাছ লাগানো যেতে পারে ও বাঁশ জাতীয় বন সৃষ্টি করতে হবে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে।
- জলাবদ্ধতা ও বন্যা রোধে উঁচু স্থানে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী গৃহনির্মাণ করতে হবে।
- মাটি ও পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি রোধকল্পে লবণাক্ততা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে লবণ সহিষ্ণু ফসলের জাত নির্বাচন করতে হবে।
- গৃহ ও কৃষি কাজে মিষ্টি পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পুকুর, ডোবা, খাল ও নদী খনন / পুনর্খনন করতে হবে, গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে,বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।
- নদীর উপকূল ক্ষয় হ্রাস করতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন, জলগ্রহণ এলাকা (Water Shade) ব্যবস্থাপনা, নদী তীরে পাম জাতীয় গাছ ও কাশ ভার্টিভার জাতীয় তৃণ রোপণ করা যেতে পারে।
- মাছের আবাস পরিবর্তন ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । ডিমপাড়া মৌসুমে মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খরা রোধে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি জোরদারের মাধ্যমে প্রচুর বনায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
- বিপন্ন কৃষিখাতে অভিযোজন কৌশল হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশে উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে এবং খরা মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ও টেকসই উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
- জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিবেশভিত্তিক (Eco-system based) সংরক্ষণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সংকটাপন্ন এলাকাসমূহ সংরক্ষণ এবং ব্যবহারভিত্তিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সংকটাপন্ন প্রজাতি সনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- লবণাক্ত ও আর্সেনিক দূষণ এলাকার জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার কৌশল ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির প্রাপ্যতার জন্য কমিউনিটি পুকুর খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির মাত্রানুযায়ী ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
- খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য গুদাম ও কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করে মৌসুমে উৎপাদিত খাদ্যের
মজুদ ও সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে। - অবকাঠামো কৌশল হিসেবে ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধক্ষম আবাসন গড়ে তুলতে হবে, মাছ ধরার নৌকার কাঠামো আধুনিকায়ন করতে হবে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক জলাশয় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
- উপকূলীয় জনপদে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি কমাতে অভিযোজন কৌশল হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, হাঁস পালন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরও দেখুন :