ওজোন স্তরের ক্ষয়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ওজোন স্তরের ক্ষয়

ওজোন স্তরের ক্ষয়

 

ওজোন স্তরের ক্ষয়

 

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামক স্তরে ওজোন নামক গ্যাসের একটি পাতলা স্তর রয়েছে যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর অতিবেগুণি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এটি ওজোন স্তর নামে পরিচিত। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ওজোন স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওজোন স্তরের সৃষ্টি

অক্সিজেন অণু (O2) তা ফোটন কণার দ্বারা দুটি অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। অর্থাৎ

uv ফোটন 02 20

এই বিক্রিয়াটিকে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া (Photochemical Reaction) বা আলোক বিয়োজন বলে। আলোক বিয়োজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেন পরমাণুর সাথে অবিয়োজিত দ্বি-পারমাণবিক অক্সিজেন অণুর বিক্রিয়ায় ওজোন (O3) উৎপন্ন হয়।

এই বিক্রিয়ার সাথে তাপ উৎপন্ন হয় বলে বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে তাপমাত্রা অনেক বেশি। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সর্বত্র সমান নয়। নিম্ন ও মধ্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (১৫-৩৫ কি.মি. এর মধ্যে) ওজোনের ঘনত্ব সর্বাধিক।

ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ

বিভিন্ন কারণে ওজোন স্তর ধ্বংস হচ্ছে। যথা-

১. গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহ (কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন টেট্টা ক্লোরাইড, সালফার হেক্সা ক্লোরাইড) সমূহ ওজোন স্তরকে ক্ষতি করে কিন্তু সিএফসি গ্যাস প্রত্যক্ষভাবে ওজোন স্তরের ক্ষতি করে। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের CFC গ্যাসের নাম উল্লেখ করা হলো। CFC এর মধ্যে CFC 12 এবং CFC 13 সর্বাধিক ক্ষতিকর।

CFC 12 এবং CFC13 এর কার্বন যৌগগুলো জায়মান দশায় ক্লোরিন উৎপাদন করে। উৎপন্ন ক্লোরিন ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোনের অণু ধ্বংস করে। এক লক্ষ ওজোনের অণু ধ্বংসের জন্য একটি ক্লোরিনের অণুই যথেষ্ট।

২. পারমানবিক পরীক্ষার জন্য পারমাণবিক বিস্ফোরণে ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়। বিমান চলাচলের জন্য ওজোন স্তরের ক্ষতি হচ্ছে।

৩. নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার সৌরশক্তির প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি করে। নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের অণু অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে অণু ভেঙে রেডিকেলে পরিণত হয়। এবং ওজোন স্তরকে ক্ষতি করে। এছাড়াও জৈব প্রাণীর দহনের ফলে নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগ নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি হয় ।

৪. মিথেন গ্যাস ওজোন স্তরের ক্ষতি করে।

টেবিল ১০.১ ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের নাম

 

ওজোন স্তরের ক্ষয়

ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪

ওজোন স্তরের ক্ষতিকর প্রভাব

ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণে অতিবেগুণি রশ্মি (UV-A, UV-B) এর প্রভাবে, চামড়ার ভাঁজ পড়া, ত্বকের রং পরিবর্তন এমন কী ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অতিবেগুনি রশ্মির কারণে চোখের দৃষ্টিহীনতা, ছানি পড়া, মানসিক বিকৃতি প্রভৃতির প্রবণতা বাড়ছে। সর্বোপরি, আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।

উষ্ণতা-বৃদ্ধির কারণে এবং ওজোন স্তরের ক্ষতির (Ozone Layer Depletion ) দরুন জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, প্রতিবেশগত পরিবর্তন হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে। তাই ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

ওজোন স্তর ক্ষয়রোধের ব্যবস্থা

ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধে সর্বপ্রথম গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে জৈবসারের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। বন নিধন রোধ করে বনভূমি সংরক্ষণ এবং বনভূমি বৃদ্ধি করতে হবে।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধ সারাবিশ্বের জন্য পরিবেশগত উদ্বিগ্নের বিষয়। ওজোন স্তর ক্ষয়রোধে আন্তর্জাতিক নীতি ও বিভিন্ন চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশেও ওজোন স্তর ক্ষয়রোধের জন্য নীতিমালা- ২০০৪ রয়েছে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment