পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। যার দরুন পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান এবং প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, বনজ সম্পদ উন্নয়ন এবং প্রতিবেশ ও প্রতিবেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন নীতিমালা রয়েছে।

যেমন – ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩, বিপদজনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১, চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা ২০০৮ প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৩, জাতীয় মৎস্য নীতি ১৯৯৮, জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০০১, জাতীয় বন নীতি ১৯৯৪,

জাতীয় শিল্প নীতি ২০১৫ এবং জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ২০১৩ ও দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি ২০১৯। প্রত্যেকটি নীতির মূল উদ্দেশ্য টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুজ অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক বাংলাদেশে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নীতিমালাসমূহ এবং অন্যান্য নীতিমালাসমূহ চিত্রের মাধ্যমে আলোচ্য অধ্যায়ে উল্লেখ করা হলো।

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নীতিমালাসমূহ

পানি:

পানি পরিবেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে পানি বিষয়ক নীতিমালাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, উপকূলীয় অঞ্চল নীতিমালা ২০০৫, অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ২০০১, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ১৯৯৫ এবং জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ ।

খাদ্য:

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে খাদ্য পাওয়া যায়। এই লক্ষ্যে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০০৬ উল্লেখযোগ্য ।

খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি:

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি বিষয়ক নীতিমালাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- জ্বালানি নীতি ২০০৪ এবং জাতীয় জ্বালানি নীতি ১৯৯৬।

পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন:

পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পরিবেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন বিষয়ক নীতিমালা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন জাতীয় কৌশল ২০১৪, জাতীয় আর্সেনিক প্রশমন নীতি ২০০৪, জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নীতি ১৯৯৮ এবং পানি সরবরাহ ও পয়ঃবর্জ্য কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬।

কৃষি, মৎস ও প্রাণী সম্পদ :

কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি করছে। ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলছে। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় – বাংলাদেশে কৃষি বিষয়ক নীতিমালাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৩, নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ১৯৯৬, জাতীয় বীজ নীতি ১৯৯৮, জাতীয় মৎস্য নীতি ১৯৯৮,

জাতীয় প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ নীতি ২০০৭, জাতীয় পোল্ট্রি সম্প্রসারণ নীতি ২০০৮, জাতীয় প্রজনন নীতি ২০০৭, জাতীয় প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ নীতি ২০১৩, নতুন মৎস্য ব্যবস্থাপনা নীতি ১৯৮৬, প্রাণী সম্পদ নীতি এবং কর্ম পরিকল্পনা ২০০৫, জাতীয় প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ নীতি ২০১৩ ও নতুন মৎস্য ব্যবস্থাপনা নীতি ১৯৮৬ প্রভৃতি ।

ভূমি :

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । বাংলাদেশে ভূমি বিষয়ক নীতিমালাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- জাল মহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯, লবণ মহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ১৯৯২, চিংড়ি মহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ১৯৯৮, বালু মহাল ও বালু ব্যবস্থাপনা বিধি ২০১১, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০০১, খাস জমি নিষ্পত্তি নীতি ১৯৯৭ এবং অকৃষি খাস জমি নিস্পত্তি নীতি ১৯৯৫।

জলবায়ু পরিবর্তন :

জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করছে। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো- জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৩, জাতীয় বন নীতি ২০১৬, বাংলাদেশ বন প্রধান পরিকল্পনা ১৯৯৪ এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ২০০৯ প্রভৃতি ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা :

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নীতিমালাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ । সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য নীতিমালাসমূহ হলো – দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি ২০১৯, নগর স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ২০১৯,

দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ নির্দেশিকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জাতীয় পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০), মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ২০১৬, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি ২০১৫, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতি ২০১১, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রভৃতি।

পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি, আইন ও বিধিমালা

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এবং অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বর্তমানে প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুক্ষীণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মানোন্নয়নের জন্য এবং প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সর্বশেষ সংশোধিত- ২০১০),

বাংলাদেশে জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮, পরিবেশ আদালত আইন ২০১০, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ প্রভৃতি নীতি, আইন ও বিধিমালাসমূহ উল্লেখযোগ্য। চিত্র-১১.১২ লক্ষ করুন। জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮ মূলত পরিবেশ নীতি ১৯৯২ এর সংশোধিত ও পরিমার্জিত রূপ ।

 

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

চিত্র – ১১.১২ পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি, আইন ও বিধিমালাসমূহ

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও আদেশ

বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুজ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের ১৮ ক অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে (বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত, রবিবার, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭)।

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য আইনসমূহ হলো – বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২, জানমালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা ২০১০ এবং টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-২০১৭। এছাড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৬, বাংলাদেশ জীব নিরাপত্তা বিধিমালা ২০১২ প্রভৃতি। চিত্র – ১১.১৩ লক্ষ করুন।

 

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

চিত্র – ১১.১৩ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও আদেশ

বাংলাদেশের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা

নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণে পরিবেশের ওপর চাপ পড়ছে। ফলে প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে ইসিএ এলাকা হিসেবে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চারদিকের ১০ কি.মি. বিস্তৃত এলাকা প্রতিবেশগত ভাবে বাংলাদেশের সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং – ডাউকি নদী, নদীটির উভয় তীর ২০১৫ সালে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতিবেশগত ভাবে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের সংকটাপন্ন এলাকাসমূহ হচ্ছে ঝিনাইদহ জেলার মারজাত বাঁওড়, সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওড় প্রভৃতি।

প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঢাকা মহানগরের পাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীকে ২০০৯ সালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০১ সালে গুলশান – বারিধারা লেককেও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ( চিত্র ১১.১৫ )।

এস, আর, ও নং ২৯১ – আইন / ২০১৬। – বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ( ১৯৯৫ সনের ১ নং আইন) এর ধারা ২০, ধারা ৫ এর সহিত পঠিতব্য, এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ প্রণয়ন করা হয় ।

 

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

চিত্র- ১১.১৫ বাংলাদেশের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড:

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হবে, যথা:

১। বিদ্যমান প্রাকৃতিক অবস্থা ও জীববৈচিত্র্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষিত বন ও রক্ষিত এলাকা, নদ নদী, খাল-বিল প্লাবনভূমি, হাওর, বাঁওড়, লেক, জলাভূমি পাখির আবাসস্থল, মৎস অভয়াশ্রমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জলজ অভয়াশ্রম, জলাভূমির বন, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকার অবক্ষয় প্রভৃতি ক্ষতিকর কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু বা শুরু করা যাবে না।

২। পরিবেশ ও প্রতিবেশের দূষণ ও অবক্ষয় হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না ।

৩। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

৪। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হওয়ার কারণ ও সম্ভাব্য হুমকি হতে পারে এমন প্রক্রিয়া চালু রাখা যাবে না ।

৫। দেশীয় বা পরিযায়ী পাখি বা প্রাণীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ নির্ণয় করে প্রতিরোধের উপায় বের করতে হবে।

৬। বিশেষ শৈল্পিক, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্মতাত্ত্বিক স্মৃতিনিদর্শনের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধিমালা ও আদেশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধিমালা ও আদেশের মধ্যে চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা, ২০১৮ এবং বিপদজনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১ উল্লেখযোগ্য।

চিত্র – ১১.১৬ লক্ষ করুন। এস, আর, ও নং ২৯৪ – আইন / ২০০৮ – বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সালের ১ নং আইন) এর ধারা ২০ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরা বিধিমালা, ২০০৮ প্রণয়ন করেন। উক্ত নীতিমালার চিকিৎসা বর্জ্যের শ্রেণিগত বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ রয়েছে (টেবিল – ১১.১) ।

টেবিল – ১১.১ চিকিৎসা বর্জ্যের শ্রেণি বিভাগ

 

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

উৎস: চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা, ২০১৮

ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য সংক্রান্ত বিধিমালা ও আদেশ

এস, আর, ও নং ৯২- আইন/২০০৪। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ( ১৯৯৫ সনের ১ নং আইন) এর ধারা ২০ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪ প্রণয়ন করা হয় (চিত্র – ১১.১৯) ।

 

পরিবেশ বিষয়ক বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং বিধিমালাসমূহ

চিত্র – ১১.১৯ ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য সংক্রান্ত বিধিমালা ও আদেশ

জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮

পরিবেশের সকল উপাদানকে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুযোগ, পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রভৃতি বিবেচনা করে পরিবেশ নীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়।

জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮ এর প্রধান বিবেচ্য বিষয়সমূহ

১. পরিবেশের সকল উপাদানকে বিবেচনা করে পরিবেশনীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। ভূমি পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে কৃষিজ উৎপাদন শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ক্ষেত্রে ভূমির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনায় – জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি বাস্তবায়ন, ভূমির উর্বরতা সংরক্ষণ, ভূমিক্ষয় রোধ এবং ভূমি পুনরুদ্ধারে পরিবেশ সম্মত সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, প্রতিবেশ ও প্রতিবেশ অঞ্চলভিত্তিক ল্যান্ড জোনিং, ভূমির অবক্ষয়, মরুময়তা, নদীর তীরক্ষয়, ভূমিধস রোধ করতে বনায়ন ও জলাধার ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

২. এছাড়াও পরিবেশনীতিতে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশের হাওড়, বাঁওড়, খাল-বিল, নদনদী, প্লাবনভুমি প্রভৃতির জলাশয় ও পানি সম্পদকে দূষণমুক্ত রাখার এবং পানি সম্পদের পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং বর্ষায় পানি সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানি খাদ্য ও পানির উৎপাদন হতে শুরু করে খাদ্য ও পানির ব্যবহার পর্যন্ত সকল পর্যায়ে সঠিক গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানির নিশ্চিতকরণের জন্য খাদ্য নীতিমালা রয়েছে।

৩. টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ নীতিতে কৃষি নীতিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জৈব কৃষি ব্যবস্থাকে (Organic farming) প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষি – বনায়ন ( agroforestry), জৈব কৃষির প্রবর্তন পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় জুমচাষের পরিবর্তে তিন স্তরের পরিবেশবান্ধব কৃষি বনায়ন পদ্ধতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

৪. মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ নীতিতে মৎস ও প্রাণী সম্পদের সংরক্ষণ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নীতিতে নিবিড় মৎস চাষ, দেশীয় প্রজাতি সংরক্ষণ, এবং বিপন্ন প্রায় ও সংকটাপন্ন জলজ প্রাণীর সংরক্ষণের বিয়ষসমূহ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৫. মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন, বনজ সম্পদ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবেশ নীতি ২০১৮ তে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
৬. জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও জীবনিরাপত্তার জন্য বিলুপ্ত উদ্ভিদ ও প্রজাতি সংরক্ষণে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি রয়েছে পরিবেশ নীতিতে। সামগ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মান উন্নয়নের জন্য পরিবেশে বিদ্যমান জেনেটিক, প্রজাতিগত ও প্রতিবেশ বৈচিত্র্য ( ecosystem diversity ) সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সমন্বিত পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

৭. পাহাড় প্রতিবেশ (Hill Ecosystems) রক্ষার ক্ষেত্রে পাহাড় প্রধান সমস্যা হলো পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, ভূমিধ্বস, ভূমিক্ষয়, মাটি ও পানি দূষণ এবং সর্বোপরি অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এই কারণে পরিবেশ নীতিতে, ২০১৮ পাহাড় প্রতিবেশ বিষয়ক নীতিমালা রয়েছে।

৮. পরিবেশগত মান মাত্রা ( Quality, standard) নির্ধারণের জন্য পরিবেশ পরিবীক্ষণ, দূষণ পরিমাপ, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞান, গবেষণা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়সমূহ পরিবেশ নীতি ২০১৮ তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৯. উপকূলীয় ও সামুদ্রিক প্রতিবেশ (Coastal and Marine Ecosystem) রক্ষায় উপকূলীয় বনাঞ্চল, খাড়ি/নদী, বালিয়াড়ি, কর্দমাক্ত ভূমি, মোহনা, সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ, কোরাল, উপকূলীয় কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতি উপকূলীয় প্রতিবেশের অন্তর্ভুক্ত। পরিবেশ নীতি ২০১৮ তে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক প্রতিবেশের সকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এখানে সমন্বিত উপকূলীয় এলাকা ব্যবস্থাপনা, প্যারাবন, উপকূলীয় বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষার জন্য পরিবেশ নীতিতে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১০. জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮ তে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে

১১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় (Disaster Management) প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধার, দুর্যোগের ক্ষতি নিম্নতম পর্যায়ে রাখা এবং দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় পরিবেশ নীতি ২০১৮ তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১২. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিক্ষা ও সচেতনতা, পরিবেশবান্ধব পর্যটন, শিল্প উন্নয়ন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, যোগাযোগ ও পরিবহন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রস্তুতি ও অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবস্থাপনা, আইনগত কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, মানব বসতি,

বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান প্রভৃতি সকল বিষয় জাতীয় পরিবেশ নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮, পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সমন্বিত নীতি হিসেবে পরিবেশ বিষয়ক সকল কর্মকাণ্ডের দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে।

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় (Ministry of Environment and Forest (MOEF) গঠণ করা হয়। এই মন্ত্রণালয়ের রয়েছে বিভিন্ন দপ্তর। যেমন- পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন, শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট।

সংক্ষেপে, পরিবেশ নীতি ২০১৮ এর প্রধান বিবেচ্য বিষয়সমূহ হলো- টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিজ্ঞানভিত্তিক করা, প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থনৈতিক অবদানের মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রতিবেশ সেবার

(Ecosystem Services) বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে এবং প্রাত্যহিক কাজে এবং উন্নয়নের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভূমি, পানি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং অপচয় রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

আরও দেখুন :

Leave a Comment